এখন থেকে শুধুমাত্র tap অ্যাপ, Internet Payment Gateway অথবা *733# ডায়াল করে টিউশন ফি দেয়া যাবে, মাসের সংখ্যা 1 এর পরিবর্তে মাসের কোড যেমন May 2024 এর ক্ষেত্রে 052024 দিতে হবে।       Click here to pay your tuition fees online      

MORNING GLORY SCHOOL & COLLEGE

An Army Run English Medium School & College that follows National Curricula


ESTD: 1999
EIIN: 134793
School Code: 1612
College Code: 1889

করোনাকালে শিশুর যত্ন-পড়াশোনা কীভাবে?

লেখক: জয়ী জেসমিন, শিক্ষক, মর্নিং গ্লোরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং শিশু শিক্ষা মনস্তত্ত্ব ব্যবস্থপনা বিশ্লেষক।


২৫ এপ্রিল ২০২০,

প্রথম আলো

করোনাকালে শিশুর যত্ন-পড়াশোনা কীভাবে?

 

ওহ! জনন, যাও এখান থেকে পড়তে বসো, আমাকে বিবক্ত কোরো না; আহান, তুমি কিন্তু সারা দিন বিরক্ত করছ—এ–ই হয়তো চলছে ঘরে ঘরে। মা–বাবারা ইতিমধ্যে হাঁপিয়ে উঠেছেন ছোট্ট জনন, আহান, নামিরা বা জাহানদের নিয়ে। মাঝেমধ্যে শিশুদের ঘিরে স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্যও তুঙ্গে। কিন্তু এ অনিশ্চয়তার কালে সত্যি কি আমাদের অসহিষ্ণু হওয়া উচিত।

কী করবে এই শিশুরা। নেই খেলার মাঠ, নেই স্কুল। মা–বাবা ছাড়া ওদের এই মুহূর্তে আর কেউই নেই। বলতে গেলে তারা বিশাল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। সেখানে খড়কুটো আসলে মা–বাবাই। তাই এমন সময় অধৈর্য বা বিরক্তি নয়। বরং শিশুর প্রতি প্রকৃত অর্থে হতে হবে যত্নশীল। এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় অতীব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। একটি শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্য, দ্বিতীয়টি শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য এবং তৃতীয়টি শিশুর সামাজিক যোগাযোগ।

শিশুকে নিয়ে কী করা, কী করলে একটু কোয়ালিটি সময় অতিবাহিত করবে, এমন অন্ধকারেও পাবে আলোর দিশা। স্কুল, খেলার মাঠ, প্রাইভেট, আর্ট বা গানের শিক্ষক, ঘুরতে যাওয়া নেই বলে চার দেয়ালের মধ্যেই শিশুটি সুযোগ পাবে জানার, খেলার, জ্ঞানার্জনের। হ্যাঁ, আমাদের এগোতে হবে গঠনমূলক ও সৃষ্টিশীলতার পথে। চার দেয়ালের মধ্যেই খুঁজতে হবে সুযোগ। কিন্তু কীভাবে, আছে অনেক পথ। যেহেতু করোনার শেষ গন্তব্যকাল আমাদের জানা নেই। তাই শিশুকে নিয়ে থাকতে হবে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

ডিজিটালইজেশনের এই যুগে করোনার কারণে শতাব্দীর ভয়াবহতম সময় কাটাচ্ছি, একই সঙ্গে ডিজিটাল ডিভাইস বা অনলাইন টুলসগুলোকে পুঁজি করেই খুঁজতে হবে বাঁচার বা বাঁচার সুযোগ।

ছোটবেলায় পড়েছি বিজ্ঞানের অভিশাপ ও আশীর্বাদের কথা। অনিশ্চয়তার একালে ভুলে যান অভিশাপের কথা। ভাবুন বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ আশীর্বাদের মধ্যেই আছেন। ভাবুন তো আজ থেকে এক শ বছর আগের কথা, ইউরোপের স্প্যানিশ ফ্লুর কথা, কলেরা মহামারির কথা বা তারও আগে প্লেগ মহামারির কথা। তখনো মানুষ বন্দী ছিল, সামাজিক দূরত্ব পালন করেছে। অনিশ্চয়তার অন্ধকারে মৃত্যুকে সঙ্গে নিয়ে যোগাযোগহীন হয়ে নিজের ঘরকে মৃত্যুর আগেই বানিয়েছিল মৃত্যুপুরী। কিন্তু আমরা কতটা ভাগ্যবান দেখুন, ঘরে বন্দী থাকলেও বিজ্ঞানের আশীর্বাদে থেমে নেই আমাদের যোগাযোগ, বিশ্বকে জানার অফুরন্ত সুযোগ। অনলাইন টুলসগুলোতে নিজেকে তুলে ধরার, প্রকাশ করার, তথ্য জানার ও জানানোর নিরবচ্ছিন্ন মাধ্যম একেবারেই হাতের মুঠোয়। টিভি, মোবাইল, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ আছে অনেক কিছু। এত কিছু থাকা সত্ত্বেও যদি আমরা শিশুদের কোয়ালিটি মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক সুস্থতা দিতে ব্যর্থ হই, তবে সত্যিই এ অপারগতার দায় শুধুই আমাদের।

শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করুন সময় ও বয়স উপযোগী প্রাত্যহিক রুটিন। দিনটিকে ভাগ করুন তিনটি ভাগে। সকাল, দুপুর ও রাত। সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা, ৩টা থেকে ৭টা, রাত ৭টা থেকে ১১টা। এ তিনটি ফেজকে নানা ধরনের অ্যাকটিভিটিস দিয়ে শিশুর জন্য তৈরি করুন বয়স ও সময় উপযোগী কর্মপরিকল্পনা।

উদাহরণস্বরূপ নাশতা করা, পাঠ্যবই পড়া, টিভি দেখা, বাগান করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, গোসল করা। এ সময় শিশুদের নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার প্রতি অনুরাগ তৈরি করা যেতে পারে নামাজ বা প্রার্থনার অভ্যাস। বিকেল থেকে সন্ধ্যা চিত্রায়ণ, গানের বা কবিতার চর্চা, ব্যায়াম, নাশতা করা বা শিশুর পছন্দ অনুযায়ী অন্য কিছু। রাতে আবার পাঠ্যবই পড়া, নিউজ দেখা বা ইউটিউব থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক সাধারণ জ্ঞান, ইতিহাস বা রহস্যকাহিনি শোনানো, টেলিভিশনে খবর দেখা, ডিনার করা, ব্রাশ করা, হাত ধোয়া, বিছানা তৈরি করা, মশারি টানানো, পানি খাওয়ার মতো কিছু সু–অভ্যাস।

শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে শিশুর খাদ্যাভ্যাস বা ইমিউনিটি সিস্টেম ডেভেলপ করতে মা–বাবার থাকতে হবে একটি সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিকল্পনা। ঘরে আছি, বাজার–সদাই আছে পর্যাপ্ত। যা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশিই আছে। তাই বলে ঘুমঘুমাট রান্নাবান্না, ইউটিউব থেকে নতুন নতুন রেসিপি সংগ্রহ শিশুর ওপর তার অযাচিত প্রয়োগ একেবারেই ভুল চিন্তা। বাচ্চা বাইরে যেতে পারছে না, বাসাতেই চিকেন ফ্রাই, কেক, মিস্টি, বিবিয়ানি, পোলাও চলছে। এটি যদি হয় আপনার প্রাত্যহিক খাদ্য পরিকল্পনা, তবে সত্যিই আমরা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। প্রথমেই বলেছি, মহামারির এই কালেও আশীর্বাদে আছি, এ জন্যই যে কর্মব্যস্ততার এই যুগে বিলাসিতার ফাস্টফুড আর ইউরোপিয়ান খানাদানা একেবারেই পরিহার নয়, তবে দেশি পরিচ্ছন্ন ও সুষ্ঠু ধারার খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার একটি বিশাল সুযোগ।

বাড়ির রাঁধুনি হিসেবে আপনাকে হতে হবে অত্যন্ত রুচিসম্পন্ন, সচেতন। খাবার পরিবেশনকে ঘিরে আপনার সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ রন্ধনশৈলী শিশুর বা পরিবারের অন্য সদস্যদের সুস্থ ও উন্নত শরীর গঠনে এই মুহূর্তে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পরিবারকে ঘিরে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে পারে উন্নত ইমিউনিটি সিস্টেমের সুস্থ জাতি, যা করোনা নামক এই অদৃশ্য কিন্ত ভয়ানক ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে জোগাবে অফুরন্ত শক্তি।

খাদ্যতালিকা
খাবার বিষয়ে মায়েরা শিশুকে পুষ্টিকর তেল, মসলা ছাড়া ফাস্টফুডের মুখরোচক খাবারের বিপরীতে ঘরে তৈরি খাবার দেবেন। হতে পারে সকালের নাশতায় ডিম, রুটি সবজি বা দু-তিন ধরনের ডাল মিলিয়ে খিচুড়ি। সকাল দুপুরের মাঝখানে লেবু, আমলকী বা ফলের জুস, বাদাম, গাজর, শসা। দুপুরে মাছ বা মাংস, ডাল, কালোজিরা ভর্তা, সাদা ভাত। বিকেলে মসলা ছাড়া হালকা নাশতা, থাকতে পারে আদা বা লেবু মিশ্রিত রং চা। রাতে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে এক কাপ দুধ থাকলে ভালো। যেহেতু মায়েরা কাজের ফাঁকে অনলাইন টুলসগুলোর সঙ্গে থাকেন, সেহেতু ঘরের খাবারের মধ্যে কী কী ভিটামিন আছে, কোন কোন ভিটামিনের ঘাটতি আছে, যদি এই মুহূর্তে সেগুলো সংগ্রহ করতে না পারেন, তবে এর বিকল্প কী আছে, তা ইউটিউব থেকে জেনে নিতে পারেন।

ব্যায়াম
শিক্ষক হিসেবে বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি, শিশুরা শারীরিক কসরতে অত্যন্ত আনন্দ পায়। আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন, তেল, চর্বিযুক্ত খাবার শিশুদের মধ্যে যে অবিস বা ল্যাথারজিক ভাব তৈরি করে, তার বিপরীতে ব্যায়াম শিশুর ইমিউনিটি সিস্টেমকে বুস্টআপ করবে। দরকার হলে আপনার বাসায় ৪০ থেকে ৪৫ ইঞ্চির যে স্মার্ট টিভিটি আছে, তাতে ব্যায়ামের টিউটরিয়ালগুলো ডাউনলোড করে শিশুদের দেখাতে ও চর্চা করতে উদ্ধুদ্ধ করতে পারেন।

আরেকটি বিষয় নিয়মিত ঘুম। ঘরে আছি বলে অধিক রাতে ঘুমানো, সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা পরিহার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত ঘুম, সময়মতো খাওয়া আপনার ও শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মানসিক স্বাস্থ্য
শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যর মতোই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য। মনে রাখবেন, শিশুরা ছোট হলেও মনস্তত্ত্বের দিক থেকে তারা আমাদের মতোই পূর্ণাঙ্গ। তাদেরও চিন্তা হয়, হয় টেনশন ও ডিপ্রেশন। আমাদের মতো প্রকাশ করতে পারে না। এই সংকটকালে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য অনেকটাই নির্ভর করছে পরিবারের সদস্যদের ইতিবাচক মানসিকতার ওপর। দিশাহীন, অবরুদ্ধ এই শিশুদের মনস্তত্ত্বের পুরো অংশজুড়ে আছে পরিবার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক নির্দেশিকায় শিশুর জন্য ভয় ও শঙ্কামুক্ত পরিবেশ তৈরির কথা জানানো হয়েছে। শিশুকে নিজেদের সঙ্গে রেখে সদাচরণ করার প্রতি জোর দিয়েছে সংস্থাটি। শিশুদের অযাচিত চিন্তা থেকে দূরে রেখে, পারিবারিক রুটিন অনুসরণ করে অতিরিক্ত পড়াশোনা বা ক্যারিয়ারের বোঝা না চাপিয়ে খেলাধুলা বা অঙ্কনের মতো সৃষ্টিশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করতে বলা হয়েছে। আর এ রকম সংকটকালীন মুহূর্তে শিশুরা যেহেতু মা–বাবার অতিরিক্ত দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইবে, সে ক্ষেত্রে তাদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। যেসব শিশু কোভিড–১৯–এর বিষয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন, তাদের বয়স উপযোগী তথ্যগুলো সততার সঙ্গে জানিয়ে বাস্তবতা মোকাবিলা করতে বলা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় এনেছে, তা হলো শিশুর আচরণগত পরিবর্তন। যেহেতু শিশুরা এ সময় বড়দের আচরণ ও আবেগ, অনুভূতি দ্বারা প্রভাবিত হবে এবং তাদের আবেগগুলো ম্যানেজ করার চেষ্টা করবে, তাই বড়দের মানসিক স্বাস্থ্যও এই সংকটকালে ইতিবাচক থাকা জরুরি।

খেলাধুলা
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একদল মনস্তত্ত্ববিদের মতে, শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে খেলাধুলা তত্ত্ব অত্যন্ত কার্যকরী। এ ক্ষেত্রে ইনডোর গেম (লুডু, দাবা, ক্যারম, ভারসাম্য দৌড়, বল নিক্ষেপ ইত্যাদি), জ্ঞানানুশীলনমূলক খেলা (শব্দজট, কোনো বিষয় নির্ধারণ করে বলা, কুইজ, রাইমিং শব্দ তৈরি, যোগ-বিয়োগের খেলা ইত্যাদি)। ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে এসো নিজে করি এর আওতায় খেলার ছলে নানা শিক্ষণীয় বিষয় শেখানো। এ ক্ষেত্রে শিক্ষামূলক অনলাইনভিত্তিক টিউটরিয়াল থেকে পেতে পারেন বয়স উপযোগী ইনোভেটিভ আইডিয়া।

সংকটকালে আশার খবরগুলো শিশুদের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে শেয়ার করা, করোনা থেকে বাঁচার উপায়, বিজ্ঞানীরা করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে দিনরাত কাজ করছেন, অতিদ্রুতই প্রতিষেধক তৈরি হয়ে যাবে, মহামারির কাল শেষ হতে বেশি সময় লাগবে না, আবার স্বাভাবিক হবে সবকিছু। স্বপ্ন দেখান স্কুলে যাওয়ার, ঘুরতে যাওয়ার, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করার। দেখবেন দিন পার হচ্ছে আনন্দের সঙ্গে। শিশুর মনস্তত্ত্বকে প্রাধান্য দিয়ে শিশুকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে পালন করুন অগ্রদূতের ভূমিকা।

শিশুদের কথাটা শুনুন
শিশুদের আনন্দে রাখতে ওদের মনের কথাটা শুনুন ও সময় দিন। যোগাযোগ বিছিন্ন না রেখে তাদেরও সামাজিক যোগাযোগ করার সুযোগ করে দিন। তাই সম্ভব হলে অনলাইনে প্রিয় শিক্ষক, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বা ফ্যামিলি গ্রুপ তৈরি করে শিশুদের দাদা-দাদি, নানা-নানি, কাকা-মামা বা কাজিনদের কাছাকাছি থাকার সুযোগ করে দিন। গ্রুপে তথ্যভিত্তিক লেখা বা পারিবারিক গল্প, মজার মজার শিক্ষামূলক ভিডিও, প্রতিদিন কে কী করছেন, কীভাবে আছেন, জানার সুযোগ তৈরি করে দিন।

আশা করি ভালো থাকব আমরা, ভালো থাকবে আমাদের শিশুরা। অনিশ্চিত এ যাত্রায় ঘরে থাকি, সুস্থ থাকি, শিশুদের যত্নে রাখি।

 

Source: www.prothomalo.com/nagorik-sangbad/article/1652815